অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। প্রতি মুহূর্তে বেসামরিক শহীদের সংখ্যা বাড়ছে। চোখ বন্ধ করে গাজার মানুষের উপর বোমা ফেলা হচ্ছে। অবশ্য চোখ বন্ধ করে বললে ভুল হবে, কারণ ইসরাইল বোমা ফেলার জন্য এমন সব ভবন বা এলাকাকে বেছে নিচ্ছে যেখানে বেসামরিক মানুষের আনাগোনা বেশি।
ফিলিস্তিনের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ইসরাইল বোমা ফেলার জন্য বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরকে বেছে নিচ্ছে। কারণ এসব স্থানে নারী ও শিশুসহ বহু মানুষ একত্রে অবস্থান করছেন। আহত যাত্রীদের বহনকারী অ্যাম্বলেন্সে বোমা ফেলছে, মসজিদ ধ্বংস করছে। ইসরাইলের দর্প চূর্ণ হওয়া আল-আকসা তুফান অভিযানের বদলা নিতে নিরস্ত্র-নিরপরাধ মানুষদের হত্যার পথ বেছে নিয়েছে দখলদার বাহিনী। তারা এর মাধ্যমে যত বেশি সম্ভব ফিলিস্তিনিকে হত্যা করতে চাইছে। অবশ্য যুদ্ধের নীতিমালায় এমন গণহত্যা কাপুরুষতারই প্রমাণ। যেকোনো আইনেও এ ধরণের গণহত্যা নিষিদ্ধ।
রাজনৈতিক ও সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, কাপুরুষোচিত গণহত্যার মাধ্যমে ইসরাইল তার হারানো দর্প ফিরে পাবে না, ব্যর্থতা ও পরাজয়ের গ্লানি ঢাকতে পারবে না। গোটা বিশ্ব ফিলিস্তিনি সংগ্রামীদের চমকে দেওয়া অভিযান দেখেছে। দখলদার ইসরাইলের গোয়েন্দা ও সামরিক অক্ষমতা সবার কাছে এখন স্পষ্ট। ইসরাইলের গোয়েন্দা ব্যর্থতা আগামী কয়েক শতাব্দী ধরে নানা মহলে বারবার উচ্চারিত হবে। এই ঐতিহাসিক কলঙ্ক তারা কোনোভাবেই মুছে ফেলতে পারবে না। একই সঙ্গে উচ্চারিত হবে গাজায় নির্বিচার মানুষ হত্যার ইতিহাস। সাম্প্রতিক আল-আকসা তুফান অভিযান থেকে স্পষ্ট, ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগ্রামীদের সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্যই ইসরাইলের হাতে নেই। সশস্ত্র সংগ্রামীরা কোথায় অবস্থান করেন, কোথায় তাদের অস্ত্র ঘাঁটি, কারা তাদের কমান্ডার- এসব বিষয়ে পুরোপুরি অজ্ঞ ইসরাইলি গোয়েন্দা ইউনিট। এ অবস্থায় গাজায় সশস্ত্র সংগ্রামীদের অবস্থানে কোনো ভাবেই আঘাত হানতে পারবে না ইসরাইলিরা। তাদের এ সংক্রান্ত দাবির কোনো সত্যতা নেই। এর আগের যুদ্ধগুলোর সময়ও দেখা গেছে, ইসরাইল গাজায় হামলা চালিয়ে হামাস ও ইসলামি জিহাদের ব্যাপক ক্ষতিসাধনের দাবি করেছে, কিন্তু বাস্তবে বারবারই প্রমাণিত হয়েছে ঐসব হামলার পর সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামীরা আরও শক্তিশালী হয়েছে।
গাজায় এখন নিরস্ত্র-নিরপরাধ নারী-শিশুদের ওপর বোমা ফেলার পাশাপাশি সেখানে বিদ্যুৎ, খাবার, গ্যাসসহ সবকিছুই বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দখলদার ইসরাইল। আসলে গত ১৬ বছর ধরেই গাজার ওপর অবরোধ চলছে। ৩৬৫ বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট এই ভূখণ্ডের প্রায় ২০ লাখ মানুষের জীবন এখন অতিষ্ঠ। তাদের আসলে হারানোর আর কিছু বাকি নেই। তারা নিজ ভূমিতে পরবাসী, তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় কারাগারের বন্দী। ইসরাইলি অবরোধ ও হামলার কারণে গাজায় স্বাভাবিক জীবন প্রক্রিয়া বিপন্ন। আর ইসরাইলের পাশবিক তৎপরতায় সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলো। এসব দেশ মুখে নারী অধিকার, শিশু অধিকার তথা মানবাধিকারের শ্লোগান দিলেও গাজায় নির্বিচারে নারী ও শিশু হত্যার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলছে না। অতীতের মতো এবারও দখলদার ইসরাইলের পক্ষে সমর্থন ঘোষণা করেছে।
আশা নিয়েই বেঁচে থাকে মানুষ। গাজাবাসীও মুক্তির স্বপ্নে বেঁচে আছে। আজ হোক, কাল হোক মুক্তি তাদের মিলবেই। কারণ এমন জাতির জন্য স্বয়ং আল্লাহই মুক্তির সুসংবাদ দিয়ে রেখেছেন। ফিলিস্তিনিদের ঈমানি শক্তি ও সাহসই তাদের মুক্তি এনে দেবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। ঈমানদার মুসলমানেরা মৃত্যুকে ভয় পায় না, জুলুম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ার মাধ্যমে যে মৃত্যু অর্জিত হয় তা নিশ্চিত করে চীর কল্যাণময় বেহেশতি জীবন।
আর এবারের দুঃসাহসিক ‘আল আকসা তুফান’ অভিযান আবারও এই বার্তাই দিচ্ছে যে, সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন দখলদারেরা ফিলিস্তিনিদের এই পবিত্র ভূমি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে, ফিলিস্তিনিদের জন্যে এ জগতেও শান্তির সুবাতাস বইবে।
Leave a Reply